ঐশী ভট্টাচার্যের কবিতাগুচ্ছ


ঐশী ভট্টাচার্য

অনাদিপ্রেম তোমাকে ভালো না বাসলে… তোমাকে ভালো না বাসলে জানাই হতো না, কতোটা দহন, কতোটা বিসর্জনের পর এই হৃদয় হয়ে উঠেছে এক শিল্পীর হাতে গড়া কারিগর! জানাই হতো না, সেই অন্ধকার বনে জোছনার ছায়ায়, তুমি ছিলে ঠিক কতটা গভীর জলের শিকারী, যার চোখে প্রতিফলিত চাঁদের দাহ। তোমায় বিচলিতভাবে খোঁজা হতো না, জানাই হতো না, কিংবদন্তি অ্যাডামের নাগকুসুম প্রেমে জড়িয়ে ছিল সমস্ত বেদনার ফণা। জানাই হতো না, ডানাকাটা ইভের চাঁদখাওয়া অমাবস্যায় তুমি হয়ে উঠেছিলে এক ম্রিয়মান দেবশ্রীপ্রয়াণ। বোঝা হতো না তোমার স্পর্শে লুকিয়ে থাকা বাদুড় ঠোঁটের বিষ, সেই চুম্বনের নিপা ভাইরাস। হতো না বোঝা… অনাদিপ্রেমের শাস্ত্রীয় কারিশমায় আঁকা ভূগোল আর অর্থনীতির অব্যর্থ মানচিত্র, সেই সংসারের সমস্ত খুঁটিনাটি, সবই থেকে যেত আড়ালে। নিয়মকানুনের প্রলেপ মাখিয়ে ভুল হয়ে থাকা হতো না, যদি না নরককাননের অরুণিমায় লিলিথের উপাখ্যান ভাসতো প্রতিটি প্রভাতে। তোমাকে ভালো না বাসলে, এসব কিছুই জানা হতো না। এলাচফোড়ন শুনছি কেবল, ইদানীং তুমি যেন ভীষণ প্রেমাসক্ত। ভীষণ গভীর কামনা খাচ্ছে তোমার অস্তিত্ব, তোমার প্রেমের অগ্নিতে পোড়ে সময়ের চাদর, বাতাসে প্রতিধ্বনি ওঠে, তোমার হৃদয়ে প্রেমের এলাচফোড়ন। বাতাস বয়ে নিয়ে আসে তোমার গভীর চুম্বনের ঘ্রাণ, নিয়ন আলোয় মিশে যায় অগাধ আকাঙ্ক্ষা, বাতাস বলে যায় বুকে চাপা প্রেমের ধোঁয়া আর তোমার অন্তরের ফিসফিসানি। সন্ধ্যার আলোয় তুমি প্রজাপতির মতো উড়ো— প্রেমিকের ঠোঁটে বাসা বাঁধা বাসনা, চেতনার আলিঙ্গনে, তোমার সে প্রেমবধূ, প্রেমের ঘরে রোজ আসে আদরের পূর্ণিমায়। তোমার প্রেম বড় তীব্র, তোমার মনের ফাটলে বাসা বাঁধে দুরন্ত এক উন্মাদনা। খসে পড়ে সিঁথির সিঁদুরের রঙ, ঝরাপাতার সঙ্গী হয় প্রেমের মধুর বেদনায়। শুনছি কেবল, তোমার গভীরতায় ভাসছে প্রেমের গল্পগুলো, ঝরাপাতার রিক্ততার সাথে তোমার প্রেম, তোমার কামনা— ভীষণ ভীষণ প্রেম। যোনীপথের ক্রন্দন রাতের শেষ প্রান্তে, বৈরুতের আগুনে পুড়ে যায় সাদা পতাকা, শুকরের রুমাল হাতে বিবেকের পাঁচিলে দাঁড়িয়ে থাকে রুমাল চোর, তার চোখে আগুন—তার পেছনে বাদুড়ের কালো ছায়া, কাকের সুরে বাজে হারমোনিকা, যেন জীবনের করুণ আর্তি। টিনের চশমায় বুলেটপাখির ডানা ঝাপটায়, তোমার আকাশে উড়ে বেড়ায় কোকিলের অমোঘ গান, হাতে তার এক পতনের কুশপুত্তলিকা, রক্তমাখা সাঁতাল ভোরের পথে সূর্যের নিঃশব্দ বিদায়। ওদিকে, ক্ষুধার্ত শিশুদের দল, ন্যাংটো নারীর দুধ কামড়ে নেয়, ডাস্টবিনের পাশে শুয়ে থাকা কুমারী মাতা কাঁদছে, তার যিশু হারিয়েছে আলোর পথে, চামচে শেষ নৈশভোজ, সেখানে সভ্যতা খুঁজে ফেরে বিবেক। আলোর চোখে বাঁধা সকাল, সিঁদ কেটে ঢুকে আসে যুদ্ধের নিস্তব্ধতা, বুটের তালে ফুল্কিকাননের মৃত্যু— পড়ে থাকে রক্তমাখা শোকের প্রতিধ্বনি। মধুবালার প্রেমও আজ যেনো শুধুই ছলনা, বৈরুতের অগ্নিগর্ভ বুকে দাঁড়িয়ে কেউ আর গান গায় না, রুমাল চোরের রক্তাক্ত হাতে যিশুর শেষ নৈশভোজ— বিশ্ব বিবেকের ছিন্নভিন্ন অস্তিত্বের মাঝে সূর্যের হারানো যোনীপথ। ভ্রুণফল অনেক তো খেলে জল, মাছ, ঘাস, পোকামাকড়ের ঘরবসতি, ছাইপাঁশ। খেলে আকাশ ভরা তারা, সমুদ্রের তলদেশে বোনা বন-বনান্তর। খেলে নদী, ধানক্ষেতের উপমা, খেয়ে খেয়ে ঝরণা হয়ে পাহাড়কাণ্ডে পুঁতে দিলে শরাবহাওয়ার ঝাড়বাতি। পাখির চোখের ঘুমপাড়ানি মাসিপিসী... গাছের বাকলের খোলা চিঠি নিয়ে উড়িয়ে দিলে প্রেমতত্ত্বের উন্মাদনা। সেই থেকে গন্ধম হলো ক্ষুধার্ত বণিক, প্রেম আর ভালোবাসার রসায়ন ছেঁকে মাতৃত্বকালিন ছুটিতে গেলো ডিজনিল্যান্ড। চামড়ার পেটে ক্ষুধার নাম কে দেওয়া হলো—ভ্রুণফল। চিরবস্ত্র চরকা তোমার ঠোঁটের অনুবাদে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সকাল হাসে ভুল গীতার স্বর্গনাশে। হাজার গঙ্গায় তুমি হয়ে যাও অমাবস্যার দেবেন্দ্র পুরোহিত... চাঁদের কলঙ্করেখায় বৈদিক উপাদানের তপ্তমরু যোনীশ্বর চোরাবালির অনাদি শ্বাপদ। সুখের আসনের নগ্ন বাহুতে সুগন্ধি, চন্দনের গলিত ময়নাতদন্ত! ভুলে যাও কেন? যাত্রার বিয়োগফলে তুমিও যে এক বিয়োগান্ত দেবতারই প্রতিরূপ... অহংজংশনের মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যালকোহল... যা পানে মত্ত হয়ে বিকেলের মিঠে রোদে সান্ধ্যনরক চিরবস্ত্র চরকায় হাটে। যতদূর চোখ যায় যতদূর চোখ যায়, যতদূর পারো তুমি দেখতে... বেখেয়ালে উড়াল দিতে পারো এক মাতাল সমুদ্র, ছুঁয়ে দিতে পারো স্বপ্নীল গাঙচিল। খেতে পারো প্রেমিকের মগজ, পাঁজরের হাড়, মার্বেলের মতো দু’চোখ! হৃদপিণ্ড শুকিয়ে তুমি গয়না বানিয়ে পড়ে নিতে পারো আয়নায় হেসে হেসে। লিখতে পারো হাজার হাজার খানিক কবিতা, মিথ্যে বলতে পারো ঈশ্বরের কাছে, নত হতে পারো তোমার আবদ্ধ সমাজ-ব্যাবদ্ধ প্রথার কাছে! যতদূর চোখ যায়, যতদূর পারো তুমি দেখতে... খেতে পারো অ-পুরুষের চিবুকের মাংসপিণ্ড, ছেড়ে দিতে পারো তোমার অবাধ্য প্রেম, কিংবা দেয়ালে আটকে রাখতে পারো তোমার ভবঘুরে এক জোড়া অশান্ত চোখ। যতদূর চোখ যায়, যতদূর তুমি দেখো... ঘোড়ারোগ তোমরা বলো, জীবন সুন্দর! কিন্তু আমি বলি, সব ব্যতীত মৃত্যুটাই সুন্দর মানুষ বড় নিরুপায় জীব— হাজার চাওয়া পাওয়ার পরও বেঁচে থাকার বায়নাপত্রে হারাতে হয় আত্মার নির্ভরশীলতাকে! অথচ, সব পাওয়ার হাওয়াই চাদরে হারানোর শোকে মুহ্যমান হয় লালনীল সংসারের অনিকেত। যৌবন খেয়ে বসে থাকা দাঁড়কাক— জীবনের শেষে বসে হালখাতায় হয় শামিল! রঙিলা কাগজের বাহারি আয়োজনে নিমকি আর আমিত্তির ভোগ শেষে ভুল পথ ধরে শুরু হওয়া বাকির খাতায় পাঞ্জা লড়ে কী পেয়ে হাত মিলায় পঞ্জিকার তারিখ ছুঁয়ে সে রহস্য কেবল সবার অজানা। তাই বলছিলাম, সব ব্যতীত মৃত্যুটাই সুন্দর। জীবনের নাম যেখানে অর্বাচীন ঘোড়ারোগ। গুণিতক তুমি বললে, ডানে তাকাও.... তাকিয়ে দেখি নীল আকাশ, রূপোলি বাতাস, তামাটে সমুদ্র! এরপর বললে, বামে তাকাও.... আমি তাকালাম

প্রিয় পাঠক,
ফেসবুক লগইনের মাধ্যমে এখানে আপনার মতামত জানাতে পারেন। এছাড়া খানিকটা নিচে জিমেইল লগইন করে, নাম বা ইউআরএল লিখে অথবা নামহীনভাবে মতামত জানাবার ব্যবস্থা রয়েছে।
ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক, ‘ৎ’ (খণ্ড-ত)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ