সুশান্ত হালদারের ‘আগুনডানার পাখি’ ও অন্যান্য কবিতা

 


সুশান্ত হালদার


আগুনডানার পাখি

‎নাহ্! তেমন কিছু করিনি
‎আগুনডানার পাখির ডানা কেটেছি,
‎মনস্তাত্ত্বিক এই যে পরাবাস্তব ঘোরলাগা
‎এতে প্যাগোডা-বেষ্টিত ঈশ্বরের হাত নেই
‎গীর্জার পুরোহিত যদি অদৃশ্য ক্রুশে হাত রাখে, আর
‎মানসিক বিকারে বলে ফেলে-
দুর্বল-শাসিত দেশে গণতন্ত্র থাকে না, তাই পরাক্রম হতে হবে...

‎নমনীয়তার এই যে বিপরীতমুখী অবস্থান,
এতে ব্রাহ্ম সমাজে দেবতাকুলের যে আবির্ভাব ঘটে,
তাতে সৃষ্টি হয় রাজসভায় দ্রৌপদীর শ্লীলতাহানির জন্য কুরুক্ষেত্র
আর সীতাহরণে রাম-রাবণের যুদ্ধ।

‎গাছেরা স্থির, আকাশমুখী। যৌন-অঙ্গ রহিত বলে ফুলে-ফলে সজ্জিত থাকে। মাটি জানে, এ ঋণ পূর্ণ হবে প্রোথিত শেকড় যদি নুয়ে পড়ে দেহ নিঃসৃত রস-ভারে। এখানে ঈশ্বর বিলীন হাসিমাখা ফুল ফল জল আর আয়োনিক ট্রফোস্ফিয়ারে!

‎স্বভাবে মানুষ দ্বিচারি, ভুল প্রেমে নিতে চায় জিনসেং বাহাদুরি। আসলে মানুষ কল্পিত বটিকা, যার নাই আগুন-পাখনার মতো নাম-পরিচয়-ঠিকানা!


‎মানুষ হবো আবার আমি

‎মৃত্যুর ঠিক বাহান্নো দিন পর
‎যে বকুল চুপ করেছিল কিংকর্তব্যবিমূঢ়ে ‎তাকে দেখলাম
‎সূর্যমুখী ডানায় ফুল ফুটিয়েছে বসন্ত প্রভাতে
‎যে বন্ধু হরিহর-আত্মা বলে জড়িয়ে ধরতো বুকে
‎তাকে দেখলাম
‎চালতাতলায় বসে খিস্তিখেউড়ে কাম সারছে মাস্টারবেশনে
‎প্রাক্তন এখন কায়রো, ভ্রমণবিলাসী
‎শুনেছি সুইজ-ব্যাংকার সুগার-ড্যাডি,
‎ঝর্ণার যে প্রান্ত ছুঁয়ে একদা বসেছিল টুইংকেল পাখি
‎সেখানে এখন ইরোটিক অর্গাজমে ককিয়ে উঠে বুর্জ-খলিফাবাসী

‎মৃত্যুর ঠিক বাহান্নো দিন পর
‎একমাত্র পিতৃদেবকেই মনে হলো ‘ভগবান সদৃশ’
‎ছেঁড়া পাঞ্জাবির পকেটে গ্লুকোজ বিস্কুট, হাতে সিকি-দামের লাঠি লজেন্স
‎যেন পুত্র সম্ভাষণে আমার দেখা মনুমেন্ট অব লিবার্টি

‎মৃত্যুর ঠিক বাহান্নো দিন পর
‎অতীতকে দাঁড় করিয়েছি আশালতার মুখোমুখি
‎তাতে শুদ্ধাচারে আবার পেরেকঠোকা ‘মানুষ’ হবো আমি!


‎হারিয়ে যাওয়া কামিনী সকাল

‎বাবার দেওয়া বাগান ভাড়া দিয়েছি
‎যেখানে ছিল কামিনী জুঁই পলাশ,
‎বাবাকে দেখতাম-
‎সকালে উঠেই দীর্ঘ-টানে নিঃশ্বাস নিত জোরে
‎লোমশ বুক ফুলে উঠত সফেদার মতো করে
‎বাবা এখন গত, জানি না কোথায় আছে
‎তবে মনে পড়ে- স্কুলে যেতাম চওড়া কাঁধে চড়ে
‎অভিমান ছিল কাঠপেন্সিল আর ইরেজার নিয়ে
‎খেতে বসে কতবার যে জল ঢেলেছি পাতে,
‎সে কথা ভুলেই গেছি
‎ফাঁকি দেয়া জীবন যখন নিলামে তুলেছি মহাজন-আড়তে
‎বাবার দেওয়া বাগানে এখন পোল্ট্রি ফার্ম
‎ড্রাগনের চাষে হাইব্রিড গুয়াংজু ফসিল,
‎সকালে উঠেই এখন মাকে বলি...
‎বাবার মতো হারিয়ে গেছে আমাদের বৃষ্টিস্নাত কামিনী সকাল!


‎সংলাপ

‎খিল-আঁটা কপাট ধাক্কা দেবে যে
‎নির্ঘাত সে জলদস্যু কিম্বা হন্তারক নয়ত সর্বস্ব লুটে ডাকাত,
‎তুমি যে এসেছিলে, বলোনি কেন?
‎বাতাসের গুমোট সরিয়ে চলে আসতাম দক্ষিণ দুয়ারে
‎যেখানে ক্রৌঞ্চ বিরহে কান্না করছে শত ক্রৌঞ্চী আত্ম-বিহনে
‎আমাদের দেশে এখন পৌষ মাস
‎জেট ইঞ্জিনে চলে ঘোড়ায় টানা গাড়ি
‎রঙিন স্বপ্নে লেখা ‘মসকুইটো’ বিএনসিসি নগরী
‎বিজ্ঞাপন চিত্রে আজও সেই নীল নয়নার মাথা মোটা সোয়ামী
‎যার বলাৎকৃত উচ্ছ্বাসে ‘দশানন’... তুমি নয়ত আমি
‎এমনই দিনে হঠকারী সংলাপ কবিতার অক্ষরবৃত্ত জুড়ে
‎কবিরা সব তিলকরত্ন ভজন-গায়িকা সন্ন্যাসিনী কপালে
‎অথচ কথা ছিল বিশ্ব রেনেসাঁর আকালে...
‎কবিতার স্তম্ভ ধরে টান দেব তুমি-আমি সজোরে!


‎রোমান্টিক

আমি কি জানতাম
‎পোড়া সূর্যের কপালেই লিখে দিতে হবে
‎সুখের গ্যালাক্সি অগ্নিদগ্ধ ফানুসে, 
‎ক্ষতবিক্ষত দেহ হলে
‎দেখে নিও ‘সূর্য’, ভাটার আগুনে
‎কতটা দাহ্যজ্ঞানে জ্বলেছে, ওই পোড়া-ইট পাঁজরে
‎নদীদের হেঁটে যাওয়া গাঙ বিধৌত হলে
‎পাখিদের সাঁতার বায়ুস্থিত হবে,
‎আগুনের তৃষ্ণা জল হলে
‎প্রেমানল কেন সুখ হয়ে পশু অরণ্য ঘোরে?
‎আমি কি জানতাম
‎গাধার পিঠে উট চলে একাডেমিক স্থলে,
‎হিসাব মিলাতে পারিনি বলে...
‎গদ্য পদ্য ভুলে আজ ‘রোমান্টিক’ কবিতার বাসরে!

প্রিয় পাঠক,
ফেসবুক লগইনের মাধ্যমে এখানে আপনার মতামত জানাতে পারেন। এছাড়া খানিকটা নিচে জিমেইল লগইন করে, নাম বা ইউআরএল লিখে অথবা নামহীনভাবে মতামত জানাবার ব্যবস্থা রয়েছে।
ধন্যবাদান্তে,
সম্পাদক, ‘ৎ’ (খণ্ড-ত)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ